ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীর স্মার্ট বাইক সিস্টেম আবিস্কার
এক দেড় বছর আগে দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ থেকে দশমাইল যাচ্ছিলেন কুড়িগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মতিউর রহমান রিয়াত।রাস্তায় চোখের সামনেই ঘটে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা। প্রাইভেট কার ও মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে মাথায় আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান এক মোটরসাইকেল আরোহী। অন্য অনেকের মতো বাস থেকে নেমে রিয়াত দেখেন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া বাইক চালকের বয়স বড়জোর ২৭/২৮ হবে। হেলমেট না থাকায় ওই আরোহীর মস্তিষ্কে গভীর জখমের সৃষ্টি হয়, আর তাতেই তৎক্ষণাত মৃত্যু হয়। ঘটনাটি ভীষণভাবে নাড়া দেয় রিয়াতকে। শুধু একটু সচেতনতার অভাবে টগবগে এক তরুণের মৃত্যু ভাবিয়ে তোলে তাঁকে। রিয়াত দেখেন, গাড়ি দুর্ঘটনায় যত প্রাণহানি ঘটে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় এর সংখ্যা ৩০ গুণ বেশি। আর হেলমেট ব্যবহার না করায় এতে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় ৪০ শতাংশ। তখন থেকেই কিভাবে দুর্ঘটনা কমানো যায় সেটা নিয়ে ভাবতে থাকেন । চাবি ছাড়া যেমন গাড়ি চালু হয়না, তেমনি হেলমেট ছাড়া যেন মোটর সাইকেল স্টার্ট না হয়-এমন কিছু করার চিন্তা সারাক্ষণ মাথায় ঘুরতে থাকে। আর এমন চিন্তা থেকেই উদ্ভাবন করেন নতুন এক প্রযুক্তি। যার নাম দিয়েছেন স্মার্ট বাইক সিস্টেম ।এ পদ্ধতিতে চালক হেলমেট না পরে কোনোভাবেই মোটরসাইকেল স্টার্ট করতে পারবে না।
প্রযুক্তির সঙ্গে পথচলা: ছোটবেলায় ব্যাটারি চালিত গাড়ি বা এ জাতীয় কোনো খেলনা পেলেই সেটি ভেঙ্গে ভেতরে কি আছে দেখার চেষ্টা করতেন রিয়াত। বাসায় বৈদ্যুতিক কোনো কিছু নষ্ট হলে সেটি ঠিক করার চেষ্টা করতেন। এমনকি বাড়ির আশেপাশের কারও টিভি, রেডিও, মোবাইল কিংবা ঘড়ি নষ্ট হলেও ঠিক করতে যেতেন। এতে অনেক সময় উল্টোটাও হতো। দেখা যেত জিনিসটি ঠিক করার বদলে আরও নষ্ট করে ফেলেছেন রিয়াত। প্রতিবেশীরা নালিশ করতো মার কাছে। মা শাসন করতেন, মন খারাপ করতেন। ছেলেকে নিয়ে বিব্রত হতেন স্কুল শিক্ষক বাবাও। এসএসসি পাশ করে বন্ধুরা যখন বিভাগীয় কোনো শহরে পাড়ি জমিয়েছে রিয়াত তখন পড়তে আ্সলেন কুড়িগ্রাম পলিটেকনিক উদ্দ্যেশ্য এখান থেকে বের হয়ে বাবার সঙ্গে সংসারের হাল ধরা। দূরে ভালো কোন কলেজে পড়ানোর সামর্থ্য ছিল না তার পরিবারের।এখানে পড়তে এসেও নতুন কিছু উদ্ভাবনের নেশা তার পিছু ছাড়লো না, বরং সেটি আরও বাড়ল। তৈরি করলেন সোলারের মাধ্যমে চলা কম খরচের এসি। মাত্র পাঁচ হাজার টাকা খরচ করেই এটি তৈরি করা যাবে। রানা প্লাজা বা তাজরীন ফ্যাশনসের মতো বড় দুর্ঘটনার পর রেসকিউ রোবট তৈরির কথা মাথায় আসে। যেটি দুর্ঘটনায় দ্রুত অনেক বেশি সংখ্যক মানুষকে উদ্ধার করতে পারবে।কাজ অনেকটা এগিয়েও ছিলেন, কিন্তু অর্থের অভাবে সেটি আর শেষ করতে পারেননি। গত বছর ৩৭তম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় উইন্ড পাওয়ার মিলের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করে বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম আর সারা দেশে তৃতীয় পুরস্কার লাভ করেন রিয়াত।
স্মার্ট বাইক প্রকল্প: কয়েক মাস আগে কুড়িগ্রামের এসপি বাইক চালকদের হেলমেট পড়া বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেন। কেউ হেলমেট ছাড়া রাস্তায় বের হলে তাদের জরিমানা করা হতো । এছাড়া, হেলমেট না পরলে কি ধরনের দুর্ঘটনা হতে পারে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরিরও উদ্যোগ নেন তিনি। কিন্তু দেখা গেল বেশরিরভাগ চালকই যে জায়গায় পুলিশ দাঁড়িয়ে বিষয়টি তদারকি করছে, শুধু সেখানে হেলমেট ব্যবহার করছেন। ওই জায়গা পার হয়েই আবার হেলমেট খুলে ফেলছেন। রিয়াত ভাবলেন, এভাবে হবে না। এমন একটা কিছু করতে হবে, যাতে মানুষ হেলমেট পড়তে বাধ্য হয়। শুরু করলেন কাজ ।৫/৬ বার চেষ্টা করেও কিছু দাঁড় করাতে পারলেন না। খুব মন খারাপ হলো, কিন্ত হতাশ হলেন না। প্রতিদিন নতুন চিন্তা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তেন গবেষণায়। এভাবে আস্তে আস্তে যখন কিছুটা আশা তৈরি হলো, তখন দেখা দিল আরেক বিপত্তি। অর্থ সংকটে পড়লেন রিয়াত। এছাড়া নিজের কোনো মোটর সাইকেল বা হেলমেট না থাকায় উদ্ভাবন করা প্রযুক্তি পরীক্ষা করেও দেখতে পারছিলেন না ।গবেষণা মাঝামাঝি সময়ে বিষয়টি শেয়ার করলেন বন্ধু মিঠুন সরকার ও আকতারুজ্জামানের সাথে। সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিলেন তারা। তিনজন মিলে দিন রাত পরিশ্রম করে প্রায় পাঁচ ছয় মাসের চেষ্টায় দাঁড় করালেন হেলমেট ছাড়া মোটর সাইকেল স্টার্ট না নেওয়ার সিস্টেম। রিয়াত জানান, এ পদ্ধতিতে চালক হেলমেট না পরে কোনো ভাবেই মোটরসাইকেল স্টার্ট করতে পারবে না। মোটর সাইকেল স্টার্ট নিলেও, কিছুক্ষণের মধ্যেই তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া, হেলমেটের সামনে এমন একটি বায়ু সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে নেশাগ্রস্ত কেউ বাইক স্টার্ট দিতে পারবেন না। এতে ওয়ারলেস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মোটরসাইকেল ও হেলমেটে ডিভাইস বসানো থাকবে। কেউ হেলমেট ছাড়া বাইক স্টার্ট করতে গেলে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাইকে বলা হবে ‘অনুগ্রহ করে হেলমেট ব্যবহার করুন।’ উদ্ভাবকেরা জানান, হেলমেটের ডিভাইসে সোলার প্যানেল ব্যবহার করা হয়েছে। তাই এটি চার্জ দেওয়ার ঝামেলা নেই। এই প্রযুক্তিটি ইন্সটল করতে মাত্র এক হাজার টাকা লাগবে। তবে বাণিজ্যিকভাবে এটির ব্যবহার শুরু হলে খরচ আরও কমে আসবে এখনো এই প্রযুক্তিটি উন্নয়নের কাজ চলছে বলে জানান তারা।
কুড়িগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ডক্টর নুরে আলম জানান, জেলা পর্যায়ে স্কিলস কম্পিটিশন-২০১৭ অনুষ্ঠানে, ১০টি উদ্ভাবিত প্রযুক্তির মধ্যে এটি প্রথম হয়।
নতুন কিছুর স্বপ্ন: দু’চোখে কেবল নতুন কিছু করার স্বপ্ন দেখেন রিয়াত। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রনিক্স বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারে পড়ছেন তিনি। আরও উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ চান। জানেন সীমিত আয়ে চলা তার পরিবারের পক্ষে সেটি চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।বলেন, পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তার পথ চলা কিছুটা মসৃন হবে । আর না পেলেও অদম্য ইচ্ছার জোরে এগিয়ে যেতে চান। স্বপ্ন দেখেন, মানুষের কাজে লাগে এমন কিছু করার ।
From- NEWS
Share করে সবাইকে জানিয়ে দিন।
Facebook- https://www.facebook.com/BdEngineers24
আরো তথ্য জানার জন্য আপনি নিজে আমাদের পেজে ও ব্লগে এক্টিভ থাকুন এবং আমাদের পোস্ট শেয়ারের মাধ্যমে নবীন প্রকৌশলীদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করুন।
Facebook- https://www.facebook.com/BdDiplomaEngineers
Share করে সবাইকে জানিয়ে দিন।
আরো তথ্য জানার জন্য আপনি নিজে আমাদের পেজে ও ব্লগে এক্টিভ থাকুন এবং আমাদের পোস্ট শেয়ারের মাধ্যমে নবীন প্রকৌশলীদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করুন।
Facebook- https://www.facebook.com/BdDiplomaEngineers
Share করে সবাইকে জানিয়ে দিন।
Facebook link-https://www.facebook.com/BdEngineers24
Leave a Comment