ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের উচ্চশিক্ষার ঠিকানা ডুয়েট
রাজধানী ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে গাজীপুরের শিমুলতলীতে গাছগাছালিতে ঘেরা ক্যাম্পাস ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট)। দেশের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য একমাত্র সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এটি। গাজীপুর জেলা শহর থেকে ৩ কিলোমিটারের দূরের এই ক্যাম্পাসে বহু শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ডানা মেলে।
বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির বয়স মাত্র ১৩ বছর। তবে ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব সায়েন্সের অধীনে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষক প্রশিক্ষণকেন্দ্রে ‘কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামে আত্মপ্রকাশ করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। মাত্র ৮ জন শিক্ষক ও ১২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যে ‘কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং’ পথচলা শুরু করেছিল, নানা পরিবর্তনের পর এখন সেখানে পড়ছেন ২ হাজার ৭৫৭ জন শিক্ষার্থী। যাঁদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৯৯।
শিক্ষার্থীর কোলাহল
গত মঙ্গলবার গাজীপুর শহরের শিববাড়ি মোড় থেকে রওনা হই ডুয়েটের উদ্দেশে। ক্যাম্পাসে পৌঁছাতে সময় লাগল মাত্র ১০ মিনিট। ঘড়িতে তখন সকাল সাড়ে ১১টা। ক্যাম্পাসজুড়ে পিনপতন নীরবতা। নিরাপত্তাপ্রহরীদের কাছে জানতে চাই, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ নাকি?’ তিনি বলেন, পরীক্ষা চলছে। শেষ হবে দুপুর সাড়ে ১২টায়।
ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে স্মৃতিসৌধ ও ফুলের বাগান। একটু এগোলে হাতের ডান পাশে একাডেমিক ভবন, সামনে পাঠাগার। উত্তর দিকে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল। চারদিকে গাছপালা, মাঝে খেলার মাঠ। পরীক্ষা শেষ হতেই দলবেঁধে বেরিয়ে এলেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের কোলাহলে নিরিবিলি পরিবেশটা হঠাৎ বদলে গেল।
কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলো। পুরকৌশল বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র আমানত শাহ্ বলছিলেন, ‘অন্যান্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় আমাদের ক্যাম্পাসের পরিসর ছোট। তবে ক্যাম্পাসটা সাজানো-গোছানো। শিক্ষকদের তদারকি অনেক ভালো। কোনো ছাত্র ক্লাসে শতকরা ৫০ ভাগ উপস্থিত না থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাই ক্লাস ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই।’ শিক্ষার্থীরাই বলেন, এখানে রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই।
তবে বহুদিন ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসর আরও বড় করার দাবি জানিয়ে আসছেন তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে জমি বরাদ্দের দাবিতে ‘পতাকা পেয়েছি, মানচিত্র চাই’ স্লোগানে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে মাসব্যাপী শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। অনেকে অভিযোগ করলেন, এখানে কোনো বিভাগের নিজস্ব ভবন নেই, নেই কোনো গবেষণাপ্রবন্ধ বা বিশেষ গবেষণাগার।
পড়ালেখার পরিবেশ
হরতাল-অবরোধ যা-ই থাকুক, ক্লাস চালু রাখার কড়া নিয়ম জারি আছে। বিদেশি শিক্ষার্থীরাও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসেন। তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগে তিনজন এবং যন্ত্রকৌশল বিভাগে একজন ভিনদেশি ছাত্র আছেন। তাঁরা সবাই নেপাল থেকে এসেছেন। জানা গেল, ভিন দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ডুয়েটের সমঝোতা চুক্তি আছে। চুক্তির আওতায় পাঠাগার, গবেষণাগার, প্রযুক্তিগত সহায়তা ছাড়াও শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি সুবিধা দেওয়া হয়।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি অনুষদের অধীনে সাতটি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে। বিভাগের সংখ্যা মোট ১৩টি। ছাত্রদের পাঁচটি ও ছাত্রীদের জন্য একটি আবাসিক হল আছে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হলের বাসিন্দা পুরকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র এইচ আর হাবিব বলছিলেন, ‘হলের নিরাপত্তার ব্যবস্থা ভালো। যেহেতু রাজনৈতিক হট্টগোল নেই, তাই আমাদের তেমন কোনো হয়রানির শিকার হতে হয়নি।’ তবে হলগুলোতে আসনসংখ্যা অপ্রতুল। প্রতিবছর বিভিন্ন বিভাগে ৫৪০ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হচ্ছে। প্রায়ই হলে নবাগত শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হয় না।
সহশিক্ষা কার্যক্রম
ক্যাম্পাসে রয়েছে বিভিন্ন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। প্রায়ই এখানে বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। এসব কর্মকাণ্ডের জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি সংগঠন। যেমন সৃজনী, ডুয়েট ডিবেটিং সোসাইটি, ডুয়েট রোবোটিকস ক্লাব, ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, ডুয়েট স্পোর্টিং ক্লাব, ডুয়েট চেজ ক্লাব, ডুয়েট এনভায়রনমেন্ট ক্লাবসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠন।
নতুন কিছু আবিষ্কারের নেশা আলোড়িত করে এখানকার অনেক শিক্ষার্থীকে। সহকারী পরিচালক (গবেষণা ও সম্প্রসারণ) মোছা. কামরুন নাহার বলেন, গত ৪ মার্চ মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলোজিতে (এমআইএসটি) আয়োজিত রোবোটিকস প্রতিযোগিতা ‘রোবোলিউশন-২০১৭’ তে চ্যাম্পিয়ন ও দ্বিতীয় রানার আপ—দুটো পুরস্কারই জিতেছে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) শিক্ষার্থীদের দল।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি থেকে এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৪২৪ জন শিক্ষার্থী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন, যাঁদের অনেকে দেশে-বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে কাজ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (ছাত্রকল্যাণ) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘২০১৫ সালে আমরা একটি জব ফেয়ার আয়োজন করেছিলাম। ১২৬ জন চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ১২০ জনের চাকরি হয়েছে। এ বছরও আরও বড় পরিসরে জব ফেয়ার আয়োজনের পরিকল্পনা চলছে।’
ডুয়েট একটি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়
মোহাম্মদ আলাউদ্দিনউপাচার্য, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সমন্বয়ে ডুয়েট একটি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমকে আরও উন্নত ও সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। আশা করছি, সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়নের ক্ষেত্রের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে অদূর ভবিষ্যতে এখানকার শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম আরও উন্নত হবে।
মোহাম্মদ আলাউদ্দিনউপাচার্য, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সমন্বয়ে ডুয়েট একটি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমকে আরও উন্নত ও সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। আশা করছি, সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়নের ক্ষেত্রের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে অদূর ভবিষ্যতে এখানকার শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম আরও উন্নত হবে।
From- Prothom Alo News
Share করে সবাইকে জানিয়ে দিন।
PageLink- www.facebook.com/BdEngineers24
.
Page Link- www.facebook.com/BdDiplomaEngineers
PageLink- www.facebook.com/BdEngineers24
.
Page Link- www.facebook.com/BdDiplomaEngineers
Leave a Comment